নবি-রাসুলদের দাওয়াত দোয়া ও রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশ

ক্ষমার দশকে হাফেজে কোরআনগণ ১৪তম তারাবিতে কোরআনুল কারিমের গুরুত্বপূর্ণ দুইটি সুরা- ‘সুরাতুল আম্বিয়া ও সুরা হজ’ তেলাওয়াত করবেন। ১৭তম পারা তেলাওয়া সম্পন্ন হবে আজ। সুরা দুইটি ইসলাম ও মুসলমানদের ব্যক্তি পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের জন্য খুবই জরুরি। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসহ ১৮ জন নবির সম্পর্কে দিকনির্দেশনা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়াও পড়া হবে আজ।

সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১-১১২
মানুষের আক্বিদা বিশ্বাস নিয়ে মক্কায় নাজিল হয়েছে সুরা আম্বিয়া। ইসলামের প্রথম যুগের সুরা এটি। ১৮ জন নবি-রাসুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এ সুরায়। সুরাটিতে দাওয়াতের ইতিহাস স্থান পেয়েছে।

নবি-রাসুলদের দাওয়াতের ইতিহাস, পদ্ধতি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তুলে ধরে নবিজী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেওয়া হয়েছে এক অন্যরকম সান্ত্বনা। কারণ এতে ওঠে এসেছে, তৎকালীন সময়ে নবিজীর আগমনের আগে অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ১৮ জন নবির আচরণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘটনা।

সবকিছুর পরও আল্লাহ তাআলা সব নবি-রাসুলকে যেভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েছেন সে আলোচনাও রয়েছে এ সুরায়। এ সুরার অধ্যায়নই মুমিন মুসলমানকে দ্বীনের দাওয়াত ও আমলে একনিষ্ঠ হতে সহায়তা করবে। পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার দিকে নিয়ে যাবে।

সুরাটির সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি
পরকালের হিসাব-নিকাশের বিষয় দিয়ে শুরু হবে ১৪তম তারাবি। প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসের কথা তুলে ধরেছেন। দে দিন সম্পর্কে অবিশ্বাসীরা ছিল চিন্তাহীন। মানুষ এতই উদাসিন যে, পরকালের হিসাব-নিকাশ সম্পর্কেও তারা বেখবর। মহান আল্লাহ বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-
اِقۡتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمۡ وَ هُمۡ فِیۡ غَفۡلَۃٍ مُّعۡرِضُوۡنَ
‘মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় আসন্ন, অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ০১)

আল্লাহ তাআলা বলেন, মানুষের কাছ থেকে তাদের কৃতকর্মের হিসাব নেওয়ার দিন অর্থাৎ কেয়ামতের দিন ঘনিয়ে এসেছে। লোকদের নিজেদের কাজের হিসাব দেওয়ার জন্য তাদের রবের সামনে হাজির হওয়ার সময় আর বেশি দূরে নয়। মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন এ কথারই আলামত যে, মানব জাতির ইতিহাস বর্তমানে তার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে। এখন সে তার সূচনাকালের পরিবর্তে পরিণামের বেশি কাছিকাছি হয়ে গেছে।

দুনিয়ার জীবনের সূচনা ও মধ্যবর্তীকালীন পর্যায় অতিক্রান্ত হয়ে এবার শেষ পর্যায়ে শুরু হয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর একটি হাদিসে একথাই বলেছেন। তিনি নিজের হাতের দুটি আঙ্গুল পাশাপাশি রেখে বলেছেন-
‘আমার আগমন এমন সময়ে ঘটেছে। যখন আমি ও কেয়ামত এ দুটি আঙ্গুলের মতো অবস্থান করছি।’ (বুখারি)

অর্থাৎ নবিজীর আগমনের পরে শুধু কেয়ামতই আছে, মাঝখানে অন্য কোনো নবির আগমনের অবকাশ নেই। যদি সংশোধন হওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে নবিজীর দাওয়াত গ্রহণ করে সংশোধন হয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।

যখনই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কোরআনের কোনো নতুন সুরা নাজিল হতো আর তা মানুষকে শোনানো হতো তখনই অবিশ্বাসীরা তা গুরুত্ব দিতো না। মহান আল্লাহ এ বিষয়টিও আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দিয়েছেন এভাবে-
مَا یَاۡتِیۡهِمۡ مِّنۡ ذِکۡرٍ مِّنۡ رَّبِّهِمۡ مُّحۡدَثٍ اِلَّا اسۡتَمَعُوۡهُ وَ هُمۡ یَلۡعَبُوۡنَ – لَاهِیَۃً قُلُوۡبُهُمۡ ؕ وَ اَسَرُّوا النَّجۡوَی ٭ۖ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ٭ۖ هَلۡ هٰذَاۤ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ ۚ اَفَتَاۡتُوۡنَ السِّحۡرَ وَ اَنۡتُمۡ تُبۡصِرُوۡنَ
‘যখনই তাদের কাছে তাদের রব-এর কোনো নতুন উপদেশ আসে তখন তারা তা শোনে কৌতুকচ্ছলে, তাদের অন্তর থাকে অমনোযোগী। আর যারা জালেম তারা গোপনে পরামর্শ করে, এ তো তোমাদের মত একজন মানুষই, তবুও কি তোমরা দেখে-শুনে জাদুর কবলে পড়বে?’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২-৩)

হজরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আহলে কিতাবদেরকে তাদের কাছে যা আছে তা জিজ্ঞাসা করো, অথচ তারা তাদের কিতাবকে বিকৃতকরণ, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, বাড়ানো-কমানো সবই করেছে। আর তোমাদের কাছে রয়েছে এমন এক কিতাব যা আল্লাহ এই মাত্র নাজিল করেছেন, যা তোমরা পাঠ করে থাক, যাতে কোনো কিছুর সংমিশ্রণ ঘটেনি।’ (বুখারি)

যারা আখেরাত ও কবরের আজাব থেকে গাফেল এবং এ জন্য প্রস্তুতি গ্ৰহণ করে না, এটা তাদের অবস্থার অতিরিক্ত বর্ণনা। যখন তাদের সামনে কোরআনের কোনো নতুন আয়াত আসে এবং পাঠ করা হয়, তখন তারা একে কৌতুক ও হাস্য উপহাসচ্ছলে শ্রবণ করে। তাদের অন্তর আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসিন থাকে। এর এ অর্থও হতে পারে যে, তারা খেলাধুলায় লিপ্ত থাকে, কোরআনের প্রতি মনোযোগ দেয় না এবং এরূপ অৰ্থও হতে পারে যে স্বয়ং কোরআনের আয়াতের সাথেই তারা রঙতামাশা করতে থাকে। আবার এ অর্থও হতে পারে যে, এখানে খেলা মানে হচ্ছে এই জীবনের খেলা। আল্লাহ ও আখেরাতের ব্যাপারে গাফেল লোকেরা এ খেলা খেলছে।’ (কুরতুবি)

এসব উদাসিন ব্যক্তিরাই বলতো- এ ব্যক্তি তো কোনক্রমে নবি হতেই পারে না। কারণ এতো আমাদেরই মতো মানুষ, খায় দায়, বাজারে ঘুরে বেড়ায়, স্ত্রী-সন্তানও আছে। কাজেই এ লোক কি করে নবি হয়? তবে কিনা এ ব্যক্তির কথাবার্তায় এবং এর ব্যক্তিত্ত্বের মধ্যে জাদু আছে। ফলে যে ব্যক্তি এর কথা কান লাগিয়ে শোনে এবং এর কাছে যায় সে এর ভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই যদি নিজের ভালো চাও তাহলে এর কথায় কান দিয়ো না এবং এর সাথে মেলামেশা করো না। কারণ এর কথা শোনা এবং এর কাছে যাওয়া সুস্পষ্ট জাদুর ফাঁদে নিজেকে আটকে দেওয়ার মতোই।’ (ইবনে কাসির)

দুনিয়ায় আল্লাহর সব সৃষ্টি অনর্থক নয়, এ কথা অনেক সুরায় আল্লাহ বর্ণনা করেছেন। এ সুরায়ও তার পুনরাবৃত্তি করেছেন। আল্লাহ বলেন-
وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا لٰعِبِیۡنَ – لَوۡ اَرَدۡنَاۤ اَنۡ نَّتَّخِذَ لَهۡوًا لَّاتَّخَذۡنٰهُ مِنۡ لَّدُنَّاۤ ٭ۖ اِنۡ کُنَّا فٰعِلِیۡنَ
‘আকাশ পৃথিবী এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে, তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি যদি ক্রীড়া উপকরণ সৃষ্টি করতে চাইতাম, তবে আমি আমার কাছে যা আছে তা দ্বারাই তা করতাম, যদি আমাকে করতে হত।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১৬-১৭)

بَلۡ نَقۡذِفُ بِالۡحَقِّ عَلَی الۡبَاطِلِ فَیَدۡمَغُهٗ فَاِذَا هُوَ زَاهِقٌ ؕ وَ لَکُمُ الۡوَیۡلُ مِمَّا تَصِفُوۡنَ – وَ لَهٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَنۡ عِنۡدَهٗ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِهٖ وَ لَا یَسۡتَحۡسِرُوۡنَ – یُسَبِّحُوۡنَ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ لَا یَفۡتُرُوۡنَ
‘বরং আমি সত্যকে মিথ্যার উপর নিক্ষেপ করি, অতপর সত্য মিথ্যার মস্তক চুর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, অতপর মিথ্যা তৎক্ষণাৎ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তোমরা যা বলছ, তার জন্যে তোমাদের দুর্ভোগ।’ নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে যারা আছে, তারা তাঁরই। আর যারা তাঁর সান্নিধ্যে আছে তারা তাঁর ইবাদতে অহংকার করে না এবং অলসতাও করে না। তারা রাত-দিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয় না।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১৮-২০)

নবি-রাসুল প্রেরণ
আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অনেক-নবি রাসুল পাঠিয়েছেন। সব নবি-রাসুলদের দাওয়াতের স্লোগান ছিল এক ও অভিন্ন। সে সম্পর্কে প্রিয় নবিকে জানাতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا نُوۡحِیۡۤ اِلَیۡهِ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعۡبُدُوۡنِ
‘আর তোমার আগে এমন কোনো রাসুল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই অহি নাজিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদাত করো।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২৫)

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা ১৮ জন নবি-রাসুল সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও তাদের ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাঁরা হলেন-
১. হজরত মুসা আলাইহিস সালাম
২. হজরত হারুন আলাইহিস সালাম
৩. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম
৪. হজরত লুত আলাইহিস সালাম
৫ হজরত ইসহাক আলাইহিস সালাম
৬ হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম
৭ হজরত নুহ আলাইহিস সালাম
৮ হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম
৯. হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালাম
১০. হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম
১১. হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম
১২. হজরত ইদরিস আলাইহিস সালাম
১৩. হজরত জুলকিফল আলাইহিস সালাম
১৪. হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম
১৫. হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম
১৬. হজরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম
১৭. হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম এবং
১৮. রাহমাতুললিল আলামিন হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা তার বিশাল সৃষ্টির প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। যা বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সব মানুষের জন্য চিন্তার বিষয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اَوَ لَمۡ یَرَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنَّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ کَانَتَا رَتۡقًا فَفَتَقۡنٰهُمَا ؕ وَ جَعَلۡنَا مِنَ الۡمَآءِ کُلَّ شَیۡءٍ حَیٍّ ؕ اَفَلَا یُؤۡمِنُوۡنَ
‘কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩০)

وَ جَعَلۡنَا فِی الۡاَرۡضِ رَوَاسِیَ اَنۡ تَمِیۡدَ بِهِمۡ ۪ وَ جَعَلۡنَا فِیۡهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمۡ یَهۡتَدُوۡنَ
‘আমি পৃথিবীতে ভারী বোঝা (পাহাড়-পর্বত) রেখে দিয়েছি যাতে তাদেরকে নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে এবং তাতে প্রশস্ত পথ রেখেছি, যাতে তারা পথ প্রাপ্ত হয়।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩১)

وَ جَعَلۡنَا السَّمَآءَ سَقۡفًا مَّحۡفُوۡظًا ۚۖ وَّ هُمۡ عَنۡ اٰیٰتِهَا مُعۡرِضُوۡنَ
‘আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩২)

وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ وَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ کُلٌّ فِیۡ فَلَکٍ یَّسۡبَحُوۡنَ
‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৩)

মানুষসহ সব জীবের মৃত্যু সুনিশ্চিত। এমন কোনো প্রাণী নেই যে, মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে না। মহান আল্লাহ এ সুরায় সেই হুশিয়ারি সংকেতও দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন-
وَ مَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ الۡخُلۡدَ ؕ اَفَا۠ئِنۡ مِّتَّ فَهُمُ الۡخٰلِدُوۡنَ
‘আপনার আগেও কোনো মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৪)

মক্কার কাফেররা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে বলতো যে, সে তো একদিন মারাই যাবে। এ আয়াত তারই উত্তর। আল্লাহ বললেন, মৃত্যু তো প্রত্যেক মানুষের জন্য অবধারিত। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই নিয়ম-বহির্ভূত নয়। কারণ তিনিও একজন মানুষ। আর আমি কোনো মানুষকে অমরতা দান করিনি। কিন্তু যারা এ কথা বলে তারা কি মরবে না?

کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ؕ وَ نَبۡلُوۡکُمۡ بِالشَّرِّ وَ الۡخَیۡرِ فِتۡنَۃً ؕ وَ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ
‘প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৩৫)

শেষ বিচারের দিন বিচার ব্যবস্থা কেমন হবে, সে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। কারো প্রতি কোনে ধরণের জুলুম করা হবে না সে ঘোষণা দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন-
وَ نَضَعُ الۡمَوَازِیۡنَ الۡقِسۡطَ لِیَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ فَلَا تُظۡلَمُ نَفۡسٌ شَیۡئًا ؕ وَ اِنۡ کَانَ مِثۡقَالَ حَبَّۃٍ مِّنۡ خَرۡدَلٍ اَتَیۡنَا بِهَا ؕ وَ کَفٰی بِنَا حٰسِبِیۡنَ
‘আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৪৭)

এ সুরায় হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তার কাওমের সঙ্গে বিষদ আলোচনা করেছেন। যাতে ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি ওঠে এসেছে। কিন্তু তারা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সঙ্গে এ বিষয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আগুড়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘৃণ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে অবিশ্বাসী নমরূদ ও তার সম্প্রদায়। তাকে আগুণে নিক্ষেপ করে। সে সময়ে বর্ণনা এভাবে এসেছে-
قَالَ اَفَتَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَنۡفَعُکُمۡ شَیۡئًا وَّ لَا یَضُرُّکُمۡ – اُفٍّ لَّکُمۡ وَ لِمَا تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ
‘তিনি বললেন, তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর, যা তোমাদের কোনো উপকার ও করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না ? ধিক তোমাদের জন্যে এবং তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরই এবাদত কর, ওদের জন্যে। তোমরা কি বোঝ না? ‘ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৬৬-৬৭)

قَالُوۡا حَرِّقُوۡهُ وَ انۡصُرُوۡۤا اٰلِهَتَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ فٰعِلِیۡنَ – قُلۡنَا یٰنَارُ کُوۡنِیۡ بَرۡدًا وَّ سَلٰمًا عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ
‘তারা বলল, একে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের উপাস্যদের সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও। আমি বললাম, হে আগুন, তুমি ইবরাহিমরে ওপর শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৬৮-৬৯)

সুরাটিতে হজরত আইয়ুব আলাইহসি সালামের কষ্টের সময়ের বর্ণনাও এসেছে। যেখানে পয়গাম্বর আইয়ুব আলাইহিস সালাম আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা দান করেন। আল্লাহ বলেন-
وَ اَیُّوۡبَ اِذۡ نَادٰی رَبَّهٗۤ اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ – فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ فَکَشَفۡنَا مَا بِهٖ مِنۡ ضُرٍّ وَّ اٰتَیۡنٰهُ اَهۡلَهٗ وَ مِثۡلَهُمۡ مَّعَهُمۡ رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ ذِکۡرٰی لِلۡعٰبِدِیۡنَ
‘এবং স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন- ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি এবং আপনি দয়াবানদের চাইতেও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান। অতপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশতঃ আর এটা ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩-৮৪)

সুরা রাদ-এ হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে ধৈর্যশীল বলা হয়েছে। এর অর্থ, তাঁকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলা হয়েছিল, তাতে তিনি ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা করতে ছাড়েননি। কোরআনের বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, আল্লাহ তাআলা তাঁকে ধন-দৌলত, সন্তানাদি দান করেছিলেন। এরপর পরীক্ষা স্বরূপ তিনি এক সময় তাঁর কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নেন। এমনকি তিনি শারীরিক সুস্থতা থেকেও বঞ্চিত হন এবং নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন। কথিত আছে যে, আঠারো বছর দীর্ঘ পরীক্ষার পর তিনি আল্লাহর সমীপে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেন এবং সুস্থতার সঙ্গে সঙ্গে ধন-দৌলত ও সন্তানাদি দ্বিগুণ দান করেন।

বিপদে মাছের পেটে অন্ধকারে হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছিলেন, সে ঘটনাও ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ বলেন-
وَ ذَاالنُّوۡنِ اِذۡ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنۡ لَّنۡ نَّقۡدِرَ عَلَیۡهِ فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ اَنۡ
‘আর মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন, তিনি রাগ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন-
لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
অর্থ : ‘তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গোনাহগার।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)

فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ ۙ وَ نَجَّیۡنٰهُ مِنَ الۡغَمِّ ؕ وَ کَذٰلِکَ نُــۨۡجِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
‘এরপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৮)

হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের আহ্বান ও দোয়ার কথা এসেছে এ সুরায়। যা আল্লাহ তাআলা কবুল করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَ زَکَرِیَّاۤ اِذۡ نَادٰی رَبَّهٗ
‘আর স্মরণ করুন জাকারিয়ার কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল-
رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি লা তাজারনি ফারদাও ওয়া আংতা খাইরুল ওয়ারিছিন।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৯)

فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ ۫ وَ وَهَبۡنَا لَهٗ یَحۡیٰی وَ اَصۡلَحۡنَا لَهٗ زَوۡجَهٗ ؕاِنَّهُمۡ کَانُوۡا یُسٰرِعُوۡنَ فِی الۡخَیۡرٰتِ وَ یَدۡعُوۡنَنَا رَغَبًا وَّ رَهَبًا ؕوَ کَانُوۡا لَنَا خٰشِعِیۡنَ
‘অতপর আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া এবং তার জন্যে তার স্ত্রীকে প্রসবযোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৯০)

আল্লাহ তাআলা বিশ্ববাসীর জন্য প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছেন মর্মে ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)

আর প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন। সব ফয়সালা ন্যায়ানুগ হওয়ার জন্যও তিনি আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করতেন। আল্লাহ তাআলা সুরা আম্বিয়ার শেষ আয়াতে তা তুলে ধরে বলেন-
‘পয়গাম্বর বললেন,
رَبِّ احْكُم بِالْحَقِّ وَرَبُّنَا الرَّحْمَنُ الْمُسْتَعَانُ عَلَى مَا تَصِفُونَ
‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি ন্যায়ানুগ ফয়সালা করে দিন। আমাদের পালনকর্তা তো দয়াময়, তোমরা যা বলছ, সে বিষয়ে আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১১২)

সুরা হজ : আয়াত ১-৭৮
সুরা হজ। মক্কা নাকি মদিনায় নাজিল হয়েছে এ বিষয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ তাফসিরকারক বলেন, এ সুরাটি মিশ্র। এতে মক্কা ও মদিনায় অবতীর্ণ উভয় প্রকারের আয়াতই সন্নিবেশিত হয়েছে। এর কিছু আয়াত রাতে, কিছু আয়াত দিনে, কিছু আয়াত সফরে, কিছু আয়াত গৃহে অবস্থানকালে, কিছু আয়াত মক্কা, কিছু আয়াত মদিনায়, কিছু আয়াত যুদ্ধাবস্থায় এবং কিছু আয়াত শান্তি বিরাজমান অবস্থায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ সুরায় নাসেখ ও মানসুখের আয়াতও নাজিল হয়েছে এ সুরায়। এ সুরা বিষয়বস্তুগুলো হলো-

কেয়ামাতের ভূকম্পন সম্পর্কিত তথ্য; আল্লাহকে ভয় করার কথা দিয়ে শুরু হয়েছে সুরাটি। আল্লাহ বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ۚ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ
‘হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।’ (সুরা হাজ :আয়াত ১)

মায়ের গর্ভে মানব সৃষ্টির স্তর ও বিভিন্ন অবস্থার আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টির বর্ণনা দিয়ে বলেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّنَ الۡبَعۡثِ فَاِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَۃٍ ثُمَّ مِنۡ مُّضۡغَۃٍ مُّخَلَّقَۃٍ وَّ غَیۡرِ مُخَلَّقَۃٍ لِّنُبَیِّنَ لَکُمۡ ؕ وَ نُقِرُّ فِی الۡاَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ نُخۡرِجُکُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّکُمۡ ۚ وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّتَوَفّٰی وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّرَدُّ اِلٰۤی اَرۡذَلِ الۡعُمُرِ لِکَیۡلَا یَعۡلَمَ مِنۡۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَیۡئًا ؕ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ هَامِدَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡهَا الۡمَآءَ اهۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ وَ اَنۡۢبَتَتۡ مِنۡ کُلِّ زَوۡجٍۭ بَهِیۡجٍ
‘হে লোক সকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিগ্ধ হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না। তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, অতঃপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সর্বপ্রকার সুদৃশ্য উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।’ (সুরা হজ : আয়াত ৫)

বাইতুল্লায় সকল মুসলমানের সমান অধিকারের তাৎপর্য; বাইতুল্লাহ নির্মাণ সম্পর্কিত আলোচনা; গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হজের কর্যক্রমে সুন্দরভাবে সম্পাদনের বিষয়াবলীর আলোচনা; আল্লাহ বলেন-
وَ اِذۡ بَوَّاۡنَا لِاِبۡرٰهِیۡمَ مَکَانَ الۡبَیۡتِ اَنۡ لَّا تُشۡرِکۡ بِیۡ شَیۡئًا وَّ طَهِّرۡ بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡقَآئِمِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ
‘যখন আমি ইবরাহিমকে বায়তুল্লাহর স্থান ঠিক করে দিয়েছিলাম যে, আমার সাথে কাউকে শরীক করো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখ তাওয়াফকারীদের জন্যে, নামাযে দন্ডায়মানদের জন্যে এবং রকু সেজদাকারীদের জন্যে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৬)

وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ
‘ আর এবং মানুষের মধ্যে হজের জন্যে ঘোষণা প্রচার কর। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সর্বপ্রকার কৃশকায় উটের পিঠে সওয়ার হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৭)

لِّیَشۡهَدُوۡا مَنَافِعَ لَهُمۡ وَ یَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡلُوۡمٰتٍ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ۚ فَکُلُوۡا مِنۡهَا وَ اَطۡعِمُوا الۡبَآئِسَ الۡفَقِیۡرَ
‘যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাব গ্রস্থকে আহার করাও।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৮)
ثُمَّ لۡیَقۡضُوۡا تَفَثَهُمۡ وَ لۡیُوۡفُوۡا نُذُوۡرَهُمۡ وَ لۡیَطَّوَّفُوۡا بِالۡبَیۡتِ الۡعَتِیۡقِ
‘এরপর তারা যেন দৈহিক ময়লা দূর করে দেয়, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং এই সুসংরক্ষিত গৃহের তাওয়াফ করে।’ (সুরা হজ : আয়াত ২৯)

কুরবানি করার বিষয়েও দিক-নির্দেশনা উঠে এসেছে এ সুরায়। কুরবানির বিধান ও তার গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছ পৌঁছায় না তা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করে বলেন-
وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ
‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ কারার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৪)

‘যাদের অন্তর আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে ভীত হয় এবং যারা তাদের বিপদাপদে ধৈর্য্যধারণ করে এবং যারা নামায কায়েম করে ও আমি যা দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৫)

‘আর কা’বার জন্যে উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্যে মঙ্গল রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে বাঁধা অবস্থায় তাদের যবেহ করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর। অতঃপর যখন তারা কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু যাচ্ঞা করে না তাকে এবং যে যাচ্ঞা করে তাকে। এমনিভাবে আমি এগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)

‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

রাষ্ট্র পরিচালনার ৪ মূলনীতি
এ সুরায় ইসলামি রাষ্ট্রের ৪টি মূলনীতি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন মহান আল্লাহ। ক্ষমতা লাভের পর এ ৪টি বিধান বাস্তবায়নই মুমিনের কাজ। আল্লাহ বলেন-
اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَهَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لِلّٰهِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ
‘তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে-
১. তারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে;
২. জাকাত ব্যবস্থা বিন্যস্ত করবে;
৩. আর সৎকাজে আদেশ (বাস্তবায়ন করবে) দেবে আর
৪. অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারভূক্ত।’ (সুরা হজ : আয়াত ৪১)

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মুসলিম উম্মাহর জন্য সতর্ককারী। তিনি সব বিষয়ে মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক ও নসিহত পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, হে লোক সকল! আমি তো তোমাদের জন্যে স্পষ্ট ভাষায় সতর্ককারী। সুতরাং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে আছে পাপ মার্জনা এবং সম্মানজনক রুজি।’ (সুরা হজ : আয়াত ৪৯-৫০)

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সফলকাম হওয়ার আমলের ঘোষণা দিয়েছেন। যে আমলে বান্দা হবে সফলকাম। আর তাহলো নামাজে যথাযথ রুকু ও সেজদা আদায় করা। ভালো কাজ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا ارۡکَعُوۡا وَ اسۡجُدُوۡا وَ اعۡبُدُوۡا رَبَّکُمۡ وَ افۡعَلُوا الۡخَیۡرَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা হজ : আয়াত ৭৭)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরা দুটি বুঝে পড়ার এবং এর দিকনির্দেশনা মেনে যথাযথ আমল করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply