মুমিনের জন্য আল্লাহর সেরা নেয়ামত কী?

দুনিয়াতে দোষী-নির্দোষ সবাই আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করে। আল্লাহ তাআলা সবাইকে তার আলো-বাতাস সমানভাবে দান করেন। তিনি কারো প্রতি জুলুম করেন না। তবে আল্লাহ তার অনুগত বান্দাদের নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বলেছেন। যারা তারা নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে তাদের তিনি সেরা পুরস্কার দান করেন। আর তাহচ্ছে মহান রবের ক্ষমা। আর যারা তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে না তাদের পরিণতি হয় খুবই ভয়াবহ। মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-

وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার শাস্তি বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)

আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে সত্যপন্থীদের অনেক নেয়ামত দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। মুমিন বান্দার জন্য এসব নেয়ামতের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো তাঁর ক্ষমা। এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে তিনি ঘোষণা করেন-

وَ اِذۡ قُلۡنَا ادۡخُلُوۡا هٰذِهِ الۡقَرۡیَۃَ فَکُلُوۡا مِنۡهَا حَیۡثُ شِئۡتُمۡ رَغَدًا وَّ ادۡخُلُوا الۡبَابَ سُجَّدًا وَّ قُوۡلُوۡا حِطَّۃٌ نَّغۡفِرۡ لَکُمۡ خَطٰیٰکُمۡ ؕ وَ سَنَزِیۡدُ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

আর স্মরণ কর, যখন আমি বললাম, ‘তোমরা প্রবেশ কর এই জনপদে। আর তা থেকে আহার কর তোমাদের ইচ্ছানুযায়ী, স্বাচ্ছন্দ্যে এবং দরজায় প্রবেশ কর মাথা নীচু করে। আর বল ‘ক্ষমা’। তাহলে আমি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীলদের (নেয়ামত/পুরস্কার) বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৫৮)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইল কাওমের জন্য ময়দানে তীহ-এর ঘটনাকে উল্লেখ করেছেন। বনি ইসরাইল জাতির জন্য মহান আল্লাহ আসমান থেকে ‘মান্না ও সালওয়া’ দান করেছিলেন। যা ছিল আল্লাহর নেয়ামত। দীর্ঘ দিন খাওয়ার পর তারা এ খাবারে নিরানন্দ ও বিরক্ত প্রকাশ করে এবং অভ্যাস মোতাবেক খাবারের আবেদন করে। যা ছিল আল্লাহর শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতার পরিপন্থী।

এরপরই আল্লাহর পক্ষ থেকে হুকুম হলো- ‘তোমরা যে খাবার চাও, সেটা নগরবাসীর খাদ্য। যা নগরে পাওয়া সম্ভব। যদি তোমাদের সে খাদ্যের একান্তই প্রয়োজন হয়, তবে তোমাদের সামনে যে নগর রয়েছে, সেখানে প্রবেশ কর। কিন্তু নগরীতে প্রবেশের সময় যে আদব রয়েছে তা রক্ষা করতে হবে। অর্থাৎ বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে সম্মান দেখিয়ে এই নগরীতে প্রবেশ করতে হবে। তবেই তোমাদের জন্য রয়েছে মহান রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। যার ওয়াদা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা।

এরপর নগরে প্রবেশ করে তোমরা পানাহারের ব্যবস্থা করে নেবে। অথচ এর আগে মহান আল্লাহ ‘মান্না ও সালওয়া’কে উত্তম খাবার হিসেবে নিয়মিত আসমান থেকে নাজিল করতেন। যেখানে ওই খাবার পেতে বনি ইসরাইলদের কোনো কষ্ট করতে হতো না।

পরে তাদের অকৃতজ্ঞতার কারণে, তাদের চাহিদা মোতাবেক খাবার চাওয়ার কারণে, নেয়ামতে ভরপুর আসমানি খাবারের সব ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।

মহান আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় না করায় বনি ইসরাইল জাতি দীর্ঘ ৪০ বছর ময়দানে তীহ-এ দিকভ্রান্তের মতো ছুটোছুটি করেছিল। আল্লাহর অকৃতজ্ঞতার কারণে ময়দানে তীহ-এ অবস্থানকালে প্রায় ছয় লাখ লোক মরে পচে-গলে শেষ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তাদের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র বিশ জনে।

এ অভিশাপ ও ধ্বংসযজ্ঞ ছিল শুধু আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়অ আদায় না করার কারণে। আল্লাহ হুকুম-আহকাম পালন না করার কারণে। এ করুণ পরিণতি থেকে বেঁচে থাকতেই মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে সে ঘটনা উল্লেখ করেছেন। আর বেশি বেশি তার শুকরিয়া আদায় করতে বলেছেন। যে শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহর নেয়ামত বেড়ে যাবে। ক্ষমা পাবে। আর অকৃতজ্ঞ হলে ধ্বংস সুনিশ্চিত। তাই আল্লাহর এ ঘোষণা বেশি বেশি স্মরণ করা-

وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার শাস্তি বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত দুনিয়ার জীবনে সেরা নেয়ামত ‘আল্লাহর ক্ষমা’ পেতে বেশি বেশি তার শুকরিয়া আদায় করা। তাঁর অকৃতজ্ঞ না হওয়া। তবেই আল্লাহ পুরস্কার ও নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেবেন। কঠিন শাস্তি থেকেও মুক্তি দেবেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply