স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা বলার পরিণতি

স্বপ্নে যা দেখেনি তা অন্যের কাছে বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা বলা মারাত্মক অপরাধ। সজাগ থাকা অবস্থায় কোনো বিষয়ে মিথ্যা বলার চেয়ে স্বপ্ন সম্পর্কে মিথ্যা বলা জঘন্য অপরাধ। কারণ স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যারোপ যেন আল্লাহর উপরেই মিথ্যারোপ করা হয়। আল্লাহর উপর মিথ্যা বলা সৃষ্টিকুলের উপর মিথ্যা বলার চাইতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বর অপরাধ। বিষয়টি কোরআন-সুন্নায় এভাবে ওঠে এসেছে-

১. আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَؤُلاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَى رَبِّهِمْ

‘আর স্বপ্নের ব্যাপারে মিথ্যা বলা যেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর উপরেই মিথ্যা বলা।’ (সুরা হুদ : আয়াত ১৮)

সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যাচার

তাই স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা বলাই হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যাচার। স্বপ্ন সম্পর্কে এমন বর্ণনা দেওয়া- যা সে দেখেনি। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটিকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যাচার বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন-

হজরত ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে, ‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা হল আপন চোখ দিয়ে এমন কিছু দেখার (দাবি করা) যা (ওই ব্যক্তির দুই) চোখ দেখতে পায়নি।’ (বুখারি)

২. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যখন কেউ এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে; তবে মনে করবে যে তা আল্লাহর তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এ জন্য আল্লাহর শোকর আদায় করে এবং তা বর্ণনা করে। আর যখন এর বিপরীত কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে না; মনে করবে তা শয়তানের তরফ থেকে হয়েছে। তখন যেন সে এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং তা কারো কাছে বর্ণনা না করে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করবে না।’ (বুখারি)

স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা বলার পরিণতি

স্বপ্ন সম্পর্কে মিথ্যা বলার শাস্তিও মারাত্মক। স্বপ্ন সম্পর্কে মিথ্যা বর্ণনা দেওয়া ব্যক্তির শাস্তি সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে লোক এমন স্বপ্ন দেখার ভান করলো, যা সে দেখেনি; তাকে দুইটি যবের দানায় গিট দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। অথচ সে তা কখনও পারবে না। যে কেউ কোন এক দলের কথার দিকে কান লাগাল। অথচ তারা এটা পছন্দ করে না অথবা বলেছেন, অথচ তারা তার থেকে পলায়নপর। কেয়ামতের দিন তার উভয় কানে সীসা ঢেলে দেয়া হবে। আর যে কেউ প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাতে প্রাণ ফুঁকে দেয়ার জন্য বাধ্য করা হবে। কিন্তু সে প্রাণ ফুঁকতে পারবে না।’ (বুখারি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা কথা না বলা। ভালো স্বপ্ন হলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা এবং স্বপ্ন সম্পর্কে অভিজ্ঞ ব্যক্তির কাছে তা বলা। আর স্বপ্ন যদি খারাপ হয় তবে স্বপ্নের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া এবং কারো কাছে স্বপ্নের কথা না বলা। যদি কেউ স্বপ্নের ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে তবে তার কাছে ব্যক্ত করা যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জঘন্য মিথ্যাচার স্বপ্ন নিয়ে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। মিথ্যার শাস্তি ও মিথ্যা স্বপ্ন বলার সুনির্দিষ্ট শাস্তি থেকে নিরাপদ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply