স্বাস্থ্য সচেতনতায় নবিজীর (সা.) উপদেশ

সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত চাপ নেওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোনোভাবেই অতিরিক্ত চাপ নেওয়া ঠিক নয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ্য ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করতে নিষেধ করেছেন। সব সময় সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকতেও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কী সেই সব দিকনির্দেশনা ও উপদেশ?

প্রতিটি মানুষের জন্য অনুচিত যে, নিজের শরীরে সহ্যের অতিরিক্তহ বোঝা চাপিয়ে দেওয়া; শারীরিক শক্তিকে (কুপথে) নষ্ট করা। বরং সচেতন ব্যক্তির দায়িত্ব হলো- শারীরিক শক্তি সংরক্ষণ করা এবং ক্ষমতা ও সাধ্য অনুযায়ী মধ্যমপন্থায় সব কাজ সম্পাদন করা। হাদিসে পাকে নবিজীর দিকনির্দেশনা হলো-

১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কাজ ততটুকু করবে; যতটুকু করার শক্তি তোমার আছে। কেননা আল্লাহ তাআলা সে পর্যন্ত বিরক্ত হন না; যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও।’ (বুখারি, মুসলিম, ফতহুল বারি)

২. হজরত আবু কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘সে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এমন সময় উপস্থিত হলেন, যে সময় তিনি খুতবাহ দিচ্ছিলেন। হজরত আবু কায়স রৌদ্রে দাঁড়িয়ে গেলেন, (সে সময়) নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ছায়ায় চলে যেতে নির্দেম দিলে তিনি ছায়ায় চলে গেলেন।’ (বুখারি)

এমনকি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শরীরের কিছু অংশ ছায়ায় আর কিছু অংশ রৌদ্রে রাখতেও নিষেধ করেছেন। আবার শরীর ও স্বাস্থ্যের ওপর অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে নিষেধ করতেন।

৩. বাহেলা গোত্রের মুজিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা নামে এক নারী সাহাবি বর্ণনা করেছেন যে, একবার আমার বাবা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে দ্বীনি ইলম শিক্ষা করার জন্য গেলেন এবং দ্বীন সম্পর্কীয় কিছু জরুরি বিষয় অবগত হয়ে বাড়িতে ফিরে এলেন।

এক বছর পর তিনি আবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। এবার যেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মোটেই চিনতে পারেননি। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাকে চেনেননি?

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলালাইহি ওয়া সাল্লাম বলরেন, ‘না’, আমি তো তোমাকে চিনতে পারিনি। তোমার পরিচয় দাও।’

তিনি বললেন, ‘আমি বাহেলা গোত্রের একজন লোক; গত বছর আপনার খেদমতে উপস্থিত হয়েছিলাম।’

তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলরেন, ‘তোমার এ কি অবস্থা হয়েছে! গত বছর যখন তুমি এসেছিলে তখন তোমার ছবি, চেহারা-সুরত ও অবস্থা দেখতে ভালো ছিলো।’

তিনি উত্তরে বললেন, ‘আমি আপনার দরবার থেকে বিদায় নেওয়ার পর এ পর্যন্ত নিয়মিত রোজা রেখেছি, শুধু রাতে খাবার খাই।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি অনর্থক নিজেকে শাস্তিতে নিক্ষেপ করেছো এবং নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করেছো। এরপর তিনি বললেন, ‘তুমি পুরো রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখবে আর প্রতি মাসে একটি করে নফল রোজা রাখবে।’

লোকটি বলল, একদিনের বেশি রোজা রাখার অনুমতি দিন। তিনি বললেন, আচ্ছা! প্রতি মাসে দুইটি করে রোজা রাখবে। লোকটি আবারো বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আরো কিছু বেশির অনুমতি দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলরেন, ‘আচ্ছা! প্রতি মাসে তিনদিন।’

লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আরো কিছু বেশি করে দিন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আচ্ছা! প্রতি বছর সম্মানিত মাসসমূহের রোজা রাখবে এবং ছেড়ে দেবে; এরূপ প্রতি বছর করবে।’

(বর্ণনাকারী বলেন) নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথা বলার সময় নিজের তিন আঙুলি দ্বারা ইশারা করেছেন ঐগুলোকে মিলিয়েছেন এবং ছেড়ে দিয়েছেন। (এর দ্বারা এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে, রজব, শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ মাসের রোজা রাখবে এবং ছেড়ে দেবে। আবার কোনো বছর মোটেই রাখবে না।)

৪. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘মুমিন ব্যক্তি নিজেকে নিজে অপমানিত করা উচিত নয়।’ সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, মুমিন ব্যক্তি কীভাবে নিজেকে নিজে অপমানিত করে? তিনি উত্তরে বললেন, ‘(মুমিন ব্যক্তি) নিজেকে নিজে অসহনীয় (কষ্টের কাজের) পরীক্ষায় নিপতিত করে।’ (তিরমিজি)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নিজেরা সাধ্যমতো কাজ করবে। সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো কাজের চাপ নেবে না। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এমন দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দিয়েছেন। এমনকি অতিরক্তি ইবাদতের চাপকে নিজেদের প্রতি জুলুম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাই অতিরক্তি চাপ নিয়ে ইবাদত-বন্দেগি করাও ইসলাম সমর্থন করে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনি কাজে, ইবাদত-বন্দেগিতে অতিরিক্ত চাপ না নিয়ে সাধ্যমতো আমল, ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী আমলি জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

We will be happy to hear your thoughts

Leave a reply